হজ্জের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা
September 2, 2023 2023-09-07 19:19হজ্জের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা
হজ্জের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা
হজের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা হলো মানুষ কিভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে থাকে তার বাহ্যিক প্রমাণ।
শারীরিকভাবেই যদি এত বেশি আনুগত্যশীল হতে হয় তাহলে অন্তর থেকে কত বেশি অনুভূতিশীল হওয়া উচিত! কত বেশি আনুগত্যশীল হওয়ার দাবি থেকে যায়! আল্লাহর আনুগত্য করতে হলে নিজেকে কতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্যে পরিনত করতে হয়, কত বেশি কষ্ট করতে হয় হজ্জ যেন তারই দিক নির্দেশিকা বা শিক্ষক।
মহান রবের দরবারে কিভাবে দাঁড়াতে হয় তারই একটি দৃশ্য হজ্জের সকল কার্যক্রম ও আয়োজন। আনুগত্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি তার সবকিছুই হজ্জ থেকে শেখা যায়। হজ্জের অন্যতম একটি উপকার হলো: নিজের পাপ মোচন এবং প্রকৃত আনুগত্যশীল কিনা তার প্রমাণ বহন। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রমাণ করতে পেরেছে যে সত্যি সে আল্লাহর সমস্ত আনুগত্য মেনে নিয়েছে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকেই তার আনুগত্যের বিনিময়ে নিষ্পাপ করে ফেরত পাঠাবেন।
আর যারা গতানুগতিক মানুষের দেখা দেখি হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে তাদের জন্য নিষ্পাপ হওয়া তো দূরের কথা আরো পাপ বহন করে নিয়ে যাবে কারণ তারা আনুগত্যের নামে প্রতারণা করেছে তারা আল্লাহর আনুগত্য করেনি বরং তারা মানুষের আনুগত্য করেছে মানুষ যা যা করেছে তারা তাই করেছে অতএব যারা আল্লাহর আনুগত্য বুঝেই নি কিন্তু মানুষের আনুগত্যকে আল্লাহরই আনুগত্য বলে বুঝাতে চেয়েছে তারা দুনিয়াতে পাড় পেলেও পরকালে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে কারণ তারা জ্ঞান অনুপাতে কাজ করেনি, তারা আবেগ দিয়ে কাজ করেছে।
আবেগ দিয়ে কাজ করলে জ্ঞান লাগে না। আর জ্ঞান দিয়ে কাজ করলে আবেগ থাকে না। কত হাজী সাহেব হয়তো শারীরিক পরিশ্রম করেছে কিন্তু মানুষিক কোন পরিশ্রম করে নাই, কোনমতে হজের কার্যক্রম শারীরিকভাবে সম্পন্ন করলেও অভ্যন্তরীণ মানসিক পরিবর্তন হয়তো কিছুই হয়নি। অনেকেই হয়তো জানে না ইসলামে শারীরিক এবাদত বা বাহ্যিক এবাদত যতটা জরুরী তার চাইতেও অনেক বেশি জরুরী মানুষিক ইবাদত।
আপনি হয়তো জীবনে এই প্রথম শুনছেন যে এবাদত দুই প্রকার শারীরিক বা বাহ্যিক ও মানসিক বা অভ্যন্তরীণবাদক। যে কোন শারীরিক ও বাহ্যিক এবাদত করার পূর্বে সেই আমলটা বা এবাদতটা অন্তর দিয়ে আগে সম্পন্ন করতে হয় যদি অন্তর দিয়ে কাজটা আগে বাস্তবায়ন যথার্থ হয় তবে তার শারীরিক বা বাহ্যিক এবাদতটা কবুল হবে অন্যথায় কবুল হবে না। অন্তরের একটা এবাদত আছে সে জিনিসটা কয়জন জানে? আত্মা ও দেহের সংযোজনে যে এবাদত হয় তাকেই মূলত এবাদত বলে
একটি উদাহরণ দেই আমরা অনেক সময় বলে থাকি: শোন ভাই! ‘কথাটা মুখ দিয়ে বলেছি ঠিকই কিন্তু মন থেকে বলিনি ঠিক এটার মতই অন্য সব এবাদতকে এরকমই আপনি বিচার করতে পারেন।
তাহলে এবার বলুন:
আমি নামাজ পড়েছি কিন্তু মন থেকে পড়িনি,
আমি কোরআন পড়েছি কিন্তু মন থেকে পড়িনি,
আমি হজ করেছি কিন্তু মন থেকে করি এভাবে
কথার সাথে কাজের যদি মিল না থাকে তাকেই বলা হয়: ‘মন থেকে না করা তদ্রপ যথার্থ পরিমাণ না জেনে ও না বুঝে এবাদত করার নাম: মন থেকে না করা’শারীরিকভাবে মানুষের দেখা দেখি অনেক কিছু করে ফেলা যায় কিন্তু মন থেকে করতে হলে শিক্ষার মাধ্যমে পড়তে হয়।
ঠিক যেমন উদাহরণস্বর বলতে পারি: একই রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ সব দিকেই হেঁটে যায়,কিন্তু প্রত্যেকের মনের চিন্তা ভাবনা থাকে আলাদা আলাদা। সবার একসাথে পথ চলা দেখে যেমন সম্পূর্ণ সঠিক কোন ধারণা পাওয়া যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রত্যেকের মনের কথাটা না জানবেন তদ্রূপ সবাই একসাথে মিলে নামাজ বা হজ আদায় করলেও কার কি অনুভূতি? মানসিক অবস্থা ও শিক্ষা কার কেমন? এসব কিছুর উপর নির্ভরশীল তার পথ চলার প্রতিদান।
মূল কথা হলো: ইসলামের প্রত্যেকটা শব্দ, বাক্য,বাণী, দোয়া, আয়াত, জিকির,নড়া চড়া, ইশারা ইঙ্গিত সব কিছুরই একটা শিক্ষা আছে, একটা অর্থ আছে, কারণ আছে, লক্ষ্য উদ্দেশ্য আছে, বুঝার বিষয় আছে এসব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে বলতে পারেন আপনার এবাদত কবুল হবে । এক কথায়: আগে জানতে হয় তারপর আমল করতে হয়।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে মহান তাঁর আনুগত্য করার তৌফিক দান করুন!